কিডনী শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্গান। আমাদের শরীরের বর্জ্য নিষ্কাশনে এই অর্গানের বিকল্প নেই। নিজেকে সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই সুস্থ রাখতে হবে এটিকে। তাই কিডনী অসুস্থ হওয়ার আগেই আমাদের সচেতন হতে হবে। দেরি হলেই বাড়বে বিপত্তি।
কিডনী ভালো রাখতে কি আমাদের শুরু থেকেই ওষুধ খেতে হবে? মোটেও নয়। আপনার এই অর্গানটি খারাপ হওয়ার আগে থেকেই কিছু অভ্যাস যদি গড়ে তোলেন তবে কিডনীকে সুস্থ রাখা সম্ভব। মনে রাখতে হবে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা বর্তমানে একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সমস্যা।
সমস্যা শুরু হলেই একই সাথে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাহলে কিডনী ভালো রাখার জন্য কী কী করতে হবে? সে বিষয়েই অল্প বিস্তর ধারণা দেবো আপনাদের।
১. হাইড্রেটেড থাকা
হাইড্রেট থাকা মানে হলো শরীরে যেনো পানির ঘাটতি না থাকে তাই পানীয় বেশি পান করা। সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে তা এই অর্গানটির কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। একই সাথে শরীরে তরল পদার্থের ভারসাম্য বজায় রাখতেও পর্যাপ্ত পানি পান করা একান্ত জরুরি।
কিডনী আমাদের শরীরের যত বর্জ্য, বিষাক্ত পদার্থ এগুলো প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। মূলত ফিল্টারিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিডনী এই পয়:নিস্কাশনে মূল ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করলে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে।
২. সীমিত লবণ গ্রহণ
অতিরিক্ত লবণ শরীরে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। শরীরে লবণের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনীর উপর চাপ বাড়ায় এবং এর কার্যক্ষমতা কমে যায়। এক পর্যায়ে যখন সহজভাবে ফিল্টারিং হয় না তখন শরীরে পানিও জমতে পারে। তাই এই অর্গানটি ভালো রাখতে খাবারে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করা যাবে না।
৩. কায়িক পরিশ্রম
নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। এর ফলে ওজন বেড়ে যাওয়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এসব কিছু ঠিক থাকলে কিডনীও ঠিকমতো ফাংশন করবে। তাই নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। কোন কারণ ছাড়াও প্রয়োজনে পরিশ্রম করুন, হাটুন, ব্যায়াম করুন।
৪. ধূমপান এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা
ধুমপান সব রোগের জন্যই মারাত্মক ক্ষতিকর একটি অভ্যাস। এই অভ্যাস সরাসরি কিডনীর কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। অনেকেরই অ্যালকোহল বা মদ্যপানের অভ্যাস আছে তাদের ক্ষেত্রে এই অর্গানটি ঠিকমতো কাজ করে না।
যারা ধুমপান করেন না বা অ্যালকোহলও গ্রহণ করেন না তাদের কিডনী যারা ধুমপান ও অ্যালকোহলে আসক্ত তাদের চেয়ে ৫ গুণ বেশি কার্যকর। যাদের অভ্যাস তাদের খুব অচিরেই এসব অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এতে শরীর সুস্থ থাকবে।
৫. ব্যথানাশক ওষুধ এড়িয়ে চলা
আমাদের শরীরে একটু ব্যথা হলেই আমরা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করি। এ ধরণের অভ্যাস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য ব্যথা বা অকারণে ব্যথানাশক ওষুধ কিডনীর কার্যকারিতা ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয় যা বুঝতে অনেক সময় লাগে।
যখন আমরা বুঝি ততক্ষণে বিকল হয়ে পড়ে কিডনী। এছাড়াও লিভারের ব্যাপক ক্ষতি হয় অপরিমিত ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের জন্য। তাই ব্যাথানাশক ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৬. উপসর্গ উপেক্ষা করবেন না
শরীরের যে কোন অর্গানের পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছু লক্ষণ আমাদের শরীরে দেখা দেয়। কিডনীতে সমস্যা দেখা দিলে সাথে সাথেই শরীরে কিছু পরিবর্তন আসবে। সেগুলো খুব সুক্ষ্মভাবে খেয়াল করতে হবে।
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বা প্রস্রাব কম হওয়া, বিশেষ করে প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া এ ধরণের উপসর্গ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
৭. একটি সুষম খাদ্য বজায় রাখা
প্রক্রিয়াজাত খাবার আমাদের অনেক ধরণের ক্ষতি করে। বিশেষ এ ধরণের খাবারে লবণ ও মসলার ব্যবহার অত্যাধিক থাকে তাই এগুলো পরিহার করা উচিত। এছাড়াও সবসময় এক ধরণের খাবার না খেয়ে সুষম খাবার খেতে হবে।
খেয়াল রাখতে হবে যেন সব ধরনের পুষ্টি, ভিটামিন এবং খনিজ যেন আমাদের শরীর পেয়ে থাকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল, শাক, সবজি কিডনীতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। তাই এদিকটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এগুলো নিয়মিত ব্যাপার।
এছাড়াও নিয়মিত বডি চেকআপ করা উচিত। শরীরের বিশেষ বিশেষ অর্গানগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না, সেগুলোর কোন ক্ষতি হচ্ছে কিনা তা নিয়মিতই পরীক্ষা করা একান্তভাবেই জরুরি। নিজেকে সুস্থ মনে হলেও কিছু চেকআপ নিয়মিত করা দরকার।
বয়সের সাথে সাথে আমাদের শরীর নানাভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। ৩০ বছর পেরিয়ে গেলে এব্যাপারে খুব বেশি সচেতন না হলে বাকি জীবনে নানা শারীরিক জটিলতা লেগেই থাকবে। তাই খুবই সাবধান!